মহেঞ্জোদারো র বাঙালি আবিষ্কর্তা র জন্মদিন ১২ ই এপ্রিল
আপনি মহেঞ্জোদারো ফিল্ম দেখেছেন? যে ফিল্মে গ্রীক গড নামে পরিচিত হৃত্বিক রোশন অভিনয় করেছিলেন।
সেই মহেঞ্জোদারো জায়গার আবিষ্কর্তা কে চেনেন? সেই আবিষ্কর্তা র আজ জন্ম দিন। কজন জানি আমরা? এটাও কি জানেন তিনি এক জন বাঙ্গালী ছিলেন?
তাহলে আজ তার সম্বন্ধে জেনে নেই চলুন
১৯১৩ সাল। তখন ভারতে চলছে ব্রিটিশ শাসন। রাজদণ্ড থেকে ইতিহাস, সব জায়গাতে উড়ছে ইউনিয়ন জ্যাক। এই সময়ই সরকারি দফতরে একটি বিশেষ পদ খালি হল। বেশ ভারিক্কি নাম, ‘গভর্নমেন্ট এপিগ্রাফিস্ট’। আবেদনকারী ছিলেন বেশ কয়েকজন, ছিলেন এক বাঙালি যুবকও। আর্কিওলজিকাল সার্ভের সঙ্গে ছোটো থেকেই যুক্ত তিনি। দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক মহলেও বিশেষ পরিচিত। কিন্তু এই চাকরি তিনি পাননি। জন মার্শাল খারিজ করে দেন সেই আবেদন। যুক্তি ছিল, বাঙালি যুবকটি সেরকম যোগ্য নয়। বিমর্ষ হয়ে ফিরতে হয়েছিল তাঁকে।
সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেন বাঙালি যুবকটি। অবশ্য তখনও তিনি জানতেন না, জীবনে কী অপেক্ষা করে আছে। প্রাচীন ভারতের এক নতুন ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটির উন্মোচন হবে তাঁর হাত ধরে। তাঁর জন্য তখন মাটির নিচে অপেক্ষা করে আছে ‘মহেঞ্জোদাড়ো’!
রাখাল দাস বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৮৫ সালে ১২ এপ্রিল মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরের কালিমাটি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন।
রাখাল দাসবন্দ্যোপাধ্যায় ১৯১০ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের সহকারী হিসাবে কলকাতার ভারতীয় জাদুঘরে যোগদান করেছিলেন।তিনি ১৯১১ সালে ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপে সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট হিসাবে যোগদান করেন এবং ১৯১৭ সালে তাকে পশ্চিমী সার্কেলের সুপারিন্টেন্ডিং প্রত্নতত্ববিদ পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
মহেঞ্জোদাড়োতে গিয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের লোকজন। তখনও কিছুই আবিষ্কৃত হয়নি, ধু ধু মাঠ। কিছু টুক টাক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আছে। প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের ধারণা হল, এগুলো খুব বেশি নয়; বড়ো জোর দুশো বছরের পুরনো হবে।
এদিকে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ও শুনলেন ওই জায়গার কথা।
মহেঞ্জোদাড়োতে পা দিয়ে, খানিক পর্যবেক্ষণের পর তাঁর অভিজ্ঞ চোখ বুঝল, এখানে যা আছে তা কিছুতেই দুশো বছরের হতেই পারে না। বহু পুরনো এখানকার সভ্যতা, বুদ্ধেরও আগেকার। মাটির তলাতেও নিশ্চিত লুকিয়ে আছে আরও সব ‘আশ্চর্য’। সেই শুরু, আস্তে আস্তে সামনে এল ভারত তথা পৃথিবীর বিস্ময়ের! উঠে এল মহেঞ্জোদাড়ো, হরপ্পা। ইতিহাসে আরও একটি নতুন সভ্যতা যোগ হল, ‘সিন্ধু সভ্যতা’। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে কী হত, তা বলা যায় না। অবশ্য আরও একজনের নাম নিতে হয় এখানে। দয়ারাম সাহানি। রাখালদাসের সঙ্গে চিরকালের জন্য জুড়ে গেছে যে নামটি। দুজনে মিলে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন সেখানে। যার ফল, আজ আমাদের সামনে।
খননকার্যের ফলে মহেঞ্জোদারো সভ্যতার ন টি স্তর আবিষ্কৃত হয়েছে। অর্থাৎ প্রথমবার ধ্বংসের পর সেখানে আটবার সভ্যতা গড়ে উঠেছিল এই গুলিকে ক্রমান্বয়ে আবিষ্কারের পথ দেখান তিনি।
মহেঞ্জোদরো শহরটির পশ্চিম দিকে প্রায় 40 ফুট উঁচু একটি বিশালায়তন ঢিবির উপর একটি দুর্গ ছিল। অঞ্চলে কিছু ঘরবাড়ি ও আবিষ্কৃত হয়েছে সেগুলি শাসকদের বাসস্থান। এভাবেই আবিস্কারের তালিকা কখনো উঠে এসেছে রাস্তায় নর্দমা কখনো শ্রমজীবী মানুষদের বাসস্থান কখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সভা কক্ষ এর মত জীবাশ্মের ছবি।
তার উল্লেখনীয় কৃতিসমূহঃ ২ খন্ডে বাঙ্গালার ইতিহাস, পাষাণের কথা, শশাঙ্ক ও ধর্মপাল।মহেঞ্জোদারো সভ্যতার সুপ্রাচীন ধংসাবশেষ আবিষ্কার তার শ্রেষ্ঠ কীর্তি। কুষান সম্রাট কণিষ্ক সম্পর্কে তিনি যে সব তথ্য আবিষ্কার করেন তা প্রামান্য বলে বিবেচিত হয়েছে। বাংলায় পাল রাজবংশ সম্পর্কিত বহু তথ্য তিনি আবিষ্কার করেন। পাহাড়পুরে খননকার্যের পরিচালক ছিলেন তিনি। মুদ্রাসম্বন্ধীয় বিষয়ে বাংলাতে প্রথম গ্রন্থ রচনা তার অন্যতম কৃতিত্ব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন